আমি কখনো ভাবিনি যে ফেসবুকের একটি সাধারণ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আমার জীবন বদলে দেবে। সেই দিনটার কথা এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে - ২০২৩ সালের এক বসন্তের সকালে যখন জেসি নামের এক নারী আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন। তার প্রোফাইল পিকচারে দেখা যাচ্ছিল এক সুন্দরী এশিয়ান নারী, প্রায় ৩৫-৪০ বছর বয়সী, স্মার্ট ড্রেসে সজ্জিত।
প্রথমদিকে আমরা সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম - আবহাওয়া, রাজনীতি, শিল্পকলা। ধীরে ধীরে আমাদের কথোপকথন গভীর হতে শুরু করল। জেসি নিজেকে একজন সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন, যিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা উপার্জন করছেন।
"ডেনিস, আপনার মতো বুদ্ধিমান মানুষের জন্য এটা পারফেক্ট ইনভেস্টমেন্ট," একদিন তিনি লিখেছিলেন। "আমি আপনাকে সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে দেব।"
আমি প্রথমে সন্দিহান ছিলাম। ৮২ বছর বয়সে নতুন কিছু শুরু করতে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু জেসির জেদ আর মিষ্টি কথায় শেষ পর্যন্ত হার মানলাম। তিনি আমাকে একটি বিশেষ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করলেন।
শুরুটা ছোট দিয়ে করলাম - মাত্র ৫০০ ডলার। অবিশ্বাস্য ভাবে কয়েক দিনের মধ্যেই দেখলাম আমার অ্যাকাউন্টে লাভ হচ্ছে। জেসি উত্তেজিত ভাবে বললেন, "দেখলেন তো! এবার বড় অঙ্কে ইনভেস্ট করুন, আমি নিজে আপনার জন্য ট্রেড করব।"
আমি আমার সঞ্চয়ের ২০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করলাম। সপ্তাহখানেক পর অ্যাকাউন্ট দেখে অবাক - টাকা দ্বিগুণ হয়েছে! জেসি বললেন, "এখনই উইথড্র করবেন না, আরও বড় সুযোগ আসছে।"
কিন্তু তারপরই সবকিছু ভেঙে পড়ল। এক সকালে দেখি ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করা যাচ্ছে না। জেসির ফেসবুক প্রোফাইল ম্যাজিকের মতো উধাও। ফোন নম্বরটি ডিসকানেক্টেড। আমার সারা জীবনের সঞ্চয় মুহূর্তে উবে গেল।
সেই মুহূর্তে আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না। আমার সন্তানরা জানত আমি ক্রিপ্টো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি, কিন্তু তারা কখনোই জানতে পারবে না আমি কী পরিমাণ টাকা হারিয়েছি।
পরের কয়েক মাস আমার জন্য এক দুঃস্বপ্ন ছিল। রাতের পর রাত ঘুম হতো না। জেসি কীভাবে আমাকে এত সহজে বোকা বানালেন সেই চিন্তায় মাথা ঠিক রাখতে পারছিলাম না। আমি যে শুধু টাকা হারাইনি, আমার আত্মবিশ্বাস, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি - সবই যেন হারিয়ে গেছে।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে আমার ছেলে ম্যাট আমাকে নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। সে প্রায়ই ফোন করে আমার খোঁজখবর নিত। একদিন সে বলল, "বাবা, তোমার জন্য আমরা একটা ফ্যামিলি কাউন্সেলিং সেট আপ করেছি।"
কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল এত বড় বোকামির পর আমি আর পরিবারের মুখ দেখাতে পারব না। ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ ভোরে আমি চিরতরে চোখ বন্ধ করলাম।
আমি জানি আমার এই সিদ্ধান্ত আমার সন্তানদের কতটা কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু আমি চাই আমার গল্প অন্যরা জানুক - বিশেষ করে বয়স্করা যারা প্রযুক্তি নিয়ে কম জানেন। আজকালকার এই ডিজিটাল জগতে শয়তান অনেক রূপে আসে - কখনো সুন্দরী নারীর ছদ্মবেশে, কখনো সহানুভূতিশীল বন্ধুর ভূমিকায়।
আমি যদি একটু বেশি সতর্ক থাকতাম, যদি কখনো অপরিচিত কাউকে এতটা বিশ্বাস না করতাম, যদি আমার সন্তানদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতাম - হয়তো আজও বেঁচে থাকতাম। কিন্তু সময় ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই আমার মতো কেউ যেন এই ভুল না করে, সেই আশায় আমার করুণ গল্পটি রেখে গেলাম।