ডাবলিনের এক কফিশপে বসে টমাস ফোনে স্ক্রল করছিলেন। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি বিজ্ঞাপনে—"ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করুন, ৩০ দিনে ৩০০% রিটার্ন!" নীল-সাদা রঙের ফ্ল্যাশি বিজ্ঞাপনটিতে ঝলমলে গ্রাফিক্স আর সাফল্যের গল্পে ভরপুর। প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিলেন, কিন্তু রাত জেগে বারবার সেই পেজে ফিরে গেলেন। "৫০ ইউরো দিয়ে টেস্ট করলেই ক্ষতি কী?"—মনের মধ্যে কৌতূহলের কণ্ঠস্বর জেগে উঠল।
পরের দিন, একটি অজানা প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রথম জমা দিলেন ৫০ ইউরো। এক সপ্তাহ পর দেখলেন, সেটা বেড়ে হয়েছে ৭০ ইউরো! "এটা তো কাজ করছে!"—আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দিল তাঁকে।
কিছুদিন পর এক ভোরে ফোনে অজানা নম্বর থেকে কল এলো। ফোনের ওপাশে এক তরুণী—নাম জেনিফার, ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্মের "ক্লায়েন্ট ম্যানেজার"। মিষ্টি স্বরে বললেন, "মিস্টার টমাস, আপনার পোর্টফোলিও বেশ ভালো চলছে! কিন্তু আরও বড় ইনভেস্টমেন্ট করলে লাভ হবে দ্বিগুণ!" টমাস সন্দেহ করলেন, কিন্তু জেনিফার তাঁকে ভিডিও কলের লিঙ্ক পাঠালেন। স্ক্রিনে দেখা গেল এক সুদর্শন যুবক—নাম ডেভিড, কাজাখস্তানের পাসপোর্ট দেখিয়ে পরিচয় দিল।
"আমি এই প্ল্যাটফর্মের হেড অব অপারেশনস,"—বলেই সে টমাসের অ্যাকাউন্টের "এক্সক্লুসিভ অফার" আনলক করে দিল—"৫,০০০ ইউরো ইনভেস্ট করলে বোনাস ২০%!"
টমাস ৫০০ ইউরো দিয়ে শুরু করে এখন ৩,০০০ ইউরো ঢাললেন। অ্যাকাউন্টে ইউরো বাড়ছেই! একপর্যায়ে ৬০০ ইউরো উইথড্র করতেও সক্ষম হলেন। "এবার বড় শট!"—ভেবে ১২,০০০ ইউরো জমা দিলেন।
কিন্তু এরপরই সবকিছু থেমে গেল। "ফান্ড উইথড্র করার রিকোয়েস্ট ফেইলড,"—লাল হরফে মেসেজ এলো। ডেভিডের ফোন নম্বর ডিসকানেক্টেড। জেনিফারের হোয়াটসঅ্যাপে নীল টিক চলে গেল, কিন্তু জবাব নেই। টমাসের গলা শুকিয়ে এলো।
হঠাৎ এক মাস পর ডেভিডের থেকে মেইল এলো: "আপনার ফান্ড রিলিজ করতে ৩,০০০ ইউরো ট্যাক্স দিতে হবে!" টমাস বুঝলেন—এটা স্ক্যাম! কিন্তু ততক্ষণে ১৭,০০০ ইউরো উধাও।
ক্ষোভে-হতাশায় টমাস গুগলে সার্চ দিলেন—"How to recover scammed crypto?" এক ওয়েবসাইটে পেলেন "ক্রিপ্টো রিকভারি এক্সপার্ট" মার্কের কথা। মার্ক দাবি করলেন, তিনি ফিবি-র সাবেক এজেন্ট! টমাসের সমস্ত ডেটা এনালাইসিস করে বললেন, "আপনার টাকা ট্রেস করা গেছে! কিন্তু রিকভারি ফি ১,২০০ ইউরো।" আবারও টমাসের বিশ্বাস! ফি পাঠাতেই মার্কের ফোন অফ। এবার টমাসের চোখে পানি নয়—রাগ।
নভেম্বরের এক বৃষ্টিস্নাত সকালে টমাস গার্ডা স্টেশনে দাঁড়িয়ে বললেন, "আমি দুবার প্রতারিত হয়েছি... কিন্তু আমি শেষ শিকার নই।" ডিটেকটিভ ক্রায়ান তাঁর রিপোর্টে লিখলেন: "ক্রিপ্টো স্ক্যাম এখন আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের ব্যবসা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার 'স্ক্যাম ফ্যাক্টরি' থেকে আইরিশদের টার্গেট করা হচ্ছে।"
টমাস আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর গল্প শেয়ার করেন। স্ক্রিনে টাইপ করতে করতে তাঁর আঙুল কাঁপে: "ক্রিপ্টোর লোভে ভুলবেন না। যদি কেউ বলে 'গ্যারান্টিড প্রফিট', মনে রাখবেন—সেটি গ্যারান্টিড স্ক্যাম!"
ডিটেকটিভ ক্রায়ানের কথায় শেষ করি: "ইন্টারনেটে কেউ আপনাকে 'ফ্রি লাঞ্চ' অফার করলে, প্রশ্ন করুন—'লাঞ্চের বিল কে দেবে?'"