Responsive Image

"ডিজিটাল জালে আটকা: একটি আন্তর্জাতিক প্রতারণার গল্প"

Jan 15, 2025,   3 min  read

স্ক্যাম অভিজ্ঞতা

আমি, এরিন ওয়েস্ট, সান্তা ক্লারা কাউন্টির একজন প্রসিকিউটর হিসেবে গত ২৫ বছর ধরে নানান ধরনের অপরাধ মোকাবিলা করেছি। কিন্তু গত কয়েক বছরে এক নতুন ধরনের অনলাইন প্রতারণার মুখোমুখি হয়েছি যা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। এই ডিজিটাল যুগে আমরা প্রতিদিন যে প্রযুক্তি ব্যবহার করি, সেটাই এখন অপরাধীদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

 

আমার অফিস ক্যালিফোর্নিয়ার বে এরিয়ায় অবস্থিত - প্রযুক্তি শিল্পের হৃদয়ে। এখানে বসেই আমরা প্রথম এই নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টো স্ক্যামের তদন্ত শুরু করি। প্রতিদিন নতুন নতুন ভুক্তভোগীর কেস আসে, যাদের কেউ প্রেমের ফাঁদে পড়েছে, কেউ বা ব্যবসায়িক লোভে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, এই সব ক্ষেত্রে শিকাররাই আবার শিকারে পরিণত হচ্ছে।

 

ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের বিশেষ এজেন্ট শন ব্র্যাডস্ট্রিটের সাথে কাজ করতে গিয়ে আমি জানতে পেরেছি, এই সমস্ত টাকা শেষ পর্যন্ত চীনা গ্যাংস্টারদের হাতে যাচ্ছে। তারা এই অর্থ দিয়ে মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ায় বিশাল বিশাল কম্পাউন্ড তৈরি করছে, যেগুলো আসলে প্রতারণার কারখানা।

 

"এটা শুধু একজন মানুষের পিছনে কম্পিউটারে বসে কাজ করা নয়," শন একদিন আমাকে বলেছিলেন, "এটা সম্পূর্ণ সংগঠিত অপরাধ। প্রতিটি কম্পাউন্ডে শত শত মানুষ কাজ করে - কেউ প্রোফাইল তৈরি করে, কেউ টার্গেট বাছাই করে, কেউ বা টাকা বণ্ঠন করে।"

 

আমরা যখন প্রথম এই কেসগুলো নিতে শুরু করি, তখন বুঝতে পারিনি সমস্যাটা কত বড়। প্রতারকরা সোশ্যাল মিডিয়া, ডেটিং অ্যাপ, এমনকি LinkedIn এর মত প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করছে শিকার খুঁজে বের করার জন্য।

 

ম্যাচ গ্রুপের একজন মুখপাত্র আমাদের বলেছিলেন, "আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট ব্লক করি। কিন্তু সমস্যা হল, যেই আমরা একটাকে ব্লক করি, তারা নতুন একটা তৈরি করে ফেলে।"

 

২০২৩ সালে আমরা "Tech Against Scams Coalition" গঠন করি - যেখানে কয়েনবেস, ম্যাচগ্রুপ এবং অন্যান্য টেক কোম্পানিগুলো একসাথে কাজ শুরু করে। কিন্তু শন ঠিকই বলেছিলেন, এটা যথেষ্ট নয়। তাই আমরা "অপারেশন শ্যামরক" শুরু করি - একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, টেক কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একসাথে কাজ করছে।

 

সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য পেয়েছি গত বছর, যখন জানতে পারি এই প্রতারণার নেটওয়ার্কে কাজ করা অনেক মানুষই আসলে নিজেরা মানব পাচারের শিকার। তাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর জোর করে এই কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

 

মিয়ানমার-থাইল্যান্ড বর্ডারে গড়ে উঠেছে শহরের মতো বড় বড় কম্পাউন্ড। সেখানে শত শত মানুষ দিনরাত কাজ করে - কেউ প্রোফাইল বানায়, কেউ শিকারের সাথে সম্পর্ক গড়ে, কেউ বা টাকা লেনদেন করে। তারা যদি কাজ করতে না চায়, তাদের মারধর করা হয়, ক্ষুধার্ত রাখা হয়।

 

আমার মনে পড়ে এক বৃদ্ধার কথা, যে তার সমস্ত সঞ্চয় হারিয়েছিল একজন "ক্রিপ্টো এক্সপার্টের" হাতে, যে তাকে তিন মাস ধরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। বা সেই তরুণের কথা, যে টিন্ডারে পরিচিত এক মেয়ের প্রেমের ফাঁদে পড়ে তার বাবার রিটায়ারমেন্ট ফান্ড পর্যন্ত হারিয়েছিল।

 

আজ আমি যখন আদালতে দাঁড়াই, তখন শুধু একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে কথা বলি না, বলি এক বিশাল আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। প্রতিটি কেস শুধু একটি ফাইল নয় - এটা কারো না কারো সম্পূর্ণ জীবন ধ্বংসের গল্প।

 

আমরা হয়তো সব প্রতারককে ধরতে পারব না। কিন্তু প্রতিদিনই আমরা নতুন করে শিখছি, নতুন কৌশল তৈরি করছি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - মানুষকে সচেতন করছি। কারণ এই ডিজিটাল যুগে সচেতনতাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

0
0

Im a Bloger From Crypto

This site’s content is not investment advice, and we are not authorized to provide any. Nothing here endorses a specific trading strategy or investment decision. The information is general and submitted by project beneficiaries. Always assess it based on your goals, finances, and risks.

©2025 altswave.com. All rights reserved