মাইকেল সেলর মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির চেয়ারম্যান, সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সিইও, একটি আমেরিকান কোম্পানি যা বিজনেস ইন্টেলিজেন্স, মোবাইল সফটওয়্যার এবং ক্লাউড-ভিত্তিক সেবা প্রদান করে। তিনি বিটকয়েনের সবচেয়ে বড় কণ্ঠস্বর ও সমর্থক ক্রেতাদের মধ্যে একজন।
সেলর ১৯৮৯ সালে সঞ্জু বনসালের সাথে মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত এর সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট তিনি সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করেন কিন্তু নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন। পদত্যাগের সময় তিনি বিটকয়েনের প্রতি তার ফোকাসের কথা উল্লেখ করেন।
শিক্ষাগত ও পেশাগত পটভূমি
সেলর ১৯৬৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নেব্রাস্কার লিঙ্কনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে এয়ারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্স এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমাজে ডাবল মেজর করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বনসালের সাথে মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি প্রতিষ্ঠা করেন, যা ডেটা মাইনিং ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স সমাধানে ফোকাস করে।
ডট-কম বাবলের সময় সেলরের নেতৃত্বে মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি টিকে থাকে এবং ১৯৯৮ সালে পাবলিকলি ট্রেডেড হয়। কোম্পানিটি এন্টারপ্রাইজ অ্যানালিটিক্স ও মোবিলিটি সফটওয়্যারে বিশ্বব্যাপী নেতা হয়ে ওঠে।
সেলরের বহুমুখী সাফল্য
সেলর একজন আমেরিকান উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক নির্বাহী। তিনি একজন বিনিয়োগকারী, প্রতিষ্ঠাতা, উদ্ভাবক এবং লেখকও। তিনি ২০১২ সালে "দ্য মোবাইল ওয়েভ" বইটি লিখেন, যা মোবাইল, ক্লাউড ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।
তিনি ১৯৯৯ সালে দ্য সেলর ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে সেলর একাডেমি নামে পরিচিত হয়। তার ৪০টি পেটেন্ট রয়েছে এবং তিনি অ্যালার্ম.কম ও অ্যাঞ্জেল.কম প্রতিষ্ঠা করেন।
কর্পোরেট ফাইন্যান্সে বিটকয়েন প্রচার
২০২০ সালে সেলর মাইক্রোস্ট্র্যাটেজিকে বিটকয়েনে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে শিরোনামে আনেন। এটি ছিল কর্পোরেট ট্রেজারি রিজার্ভে ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্তর্ভুক্ত করার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি বিটকয়েনকে তার মূলধন বরাদ্দ কৌশলের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এটি প্রথম পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হিসেবে বিটকয়েন ক্রয় করে।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির ১৫৮,৪০০ বিটকয়েন রয়েছে। সেলর ব্যক্তিগতভাবেও বিটকয়েন ক্রয় করেছেন এবং তিনি বিটকয়েনের প্রচারে সক্রিয়।
ব্যক্তিগত জীবন, প্রচার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সেলর অবিবাহিত এবং ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার নেট সম্পদ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বিটকয়েন প্রচারে সক্রিয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তার মতামত ও কৌশল শেয়ার করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে কেপিএমজি ওয়াশিংটন হাই-টেক উদ্যোক্তা পুরস্কার এবং ১৯৯৭ সালে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং সফটওয়্যার উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন।
মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি এবং সেলর ২০০০ সালে এসইসির তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে সমঝোতায় নিষ্পত্তি হয়। সেলর মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির সাথে যুক্ত থাকলেও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিটকয়েন উদ্যোগে ফোকাস করা।
মাইকেল সেলরের নেতৃত্বে মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি বিটকয়েন বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্পোরেট ফাইন্যান্সে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার প্রচেষ্টা বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করছে।