ডো কওয়ান, যার পুরোনাম কওন ডো-হিয়ং, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি টেরাফর্ম ল্যাবসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং CEO। তিনি টেরা ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেম প্রকল্পের জন্য বিখ্যাত, যা ২০২২ সালের মে মাসে ধসে পড়ে। ১৯৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জন্মগ্রহণ করেন এবং ডায়েওন ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন।
ডো কওয়ানের অর্জন
২০১০ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ২০১৫ সালে স্নাতক হওয়ার পর তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে আসেন এবং Anyfi নামে একটি কানেক্টিভিটি সলিউশনস ব্যবসা শুরু করেন। এখানে তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে শেখেন এবং একটি ডিসেন্ট্রালাইজড পেমেন্ট সিস্টেমের ধারণা নিয়ে একটি হোয়াইট পেপার প্রকাশ করেন। ২০১৮ সালে ড্যানিয়েল শিনের সাথে মিলে তিনি টেরাফর্ম ল্যাবস প্রতিষ্ঠা করেন এবং টেরা (LUNA) ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করেন।
টেরার পতন
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, টেরাফর্ম ল্যাবস টেরা USD (UST) নামক একটি অ্যালগরিদমিক স্টেবল কয়েন চালু করে, যা মার্কিন ডলারের সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের মে মাসে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক বিক্রয়ের কারণে UST ডলার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে LUNA এবং UST উভয়ের মূল্য ৯৯% কমে যায়। এই ঘটনায় প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ ক্রিপ্টো বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
কর্তৃপক্ষের তদন্ত
টেরার পতনের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ ডো কওয়ান এবং টেরাফর্ম ল্যাবসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালত ডো কওয়ানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কওয়ান সিঙ্গাপুরে থাকার কথা জানালেও, সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ জানায় যে তিনি দেশে নেই। ইন্টারপোল ডো কওয়ানের গ্রেপ্তারের জন্য একটি রেড নোটিস জারি করে।
অভিযোগ এবং গ্রেপ্তার
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) ডো কওয়ান এবং টেরাফর্ম ল্যাবসের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ জালিয়াতির অভিযোগ আনে। মার্চ ২০২৩ সালে, মন্টেনিগ্রোতে ডো কওয়ান এবং টেরাফর্ম ল্যাবসের সাবেক CFO হান চ্যাং-জুনকে জাল ডকুমেন্ট ব্যবহার করে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে জাল পাসপোর্ট এবং অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়।
ডো কওয়ানের সম্পদ
২০২৩ সালের জুলাই অনুযায়ী, ডোকওয়ানের আনুমানিক সম্পদ ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। টেরা ব্লকচেইন প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন, যার সর্বোচ্চ মূল্য ৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। তবে টেরার পতনের পর তাঁর সম্পদ ব্যাপক হ্রাস পায়।
ডো কওয়ানের জনসাধারণের ব্যক্তিত্ব
ডো কওয়ান তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য এবং সমালোচকদের প্রতি কঠোর আচরণের জন্য পরিচিত। টেরার পতনের আগে, তিনি প্রায়ই সমালোচকদের প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ মন্তব্য করতেন। তবে, টেরার পতনের পর তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় এবং তিনি "ক্রিপ্টো ক্র্যাশ কিং" নামে পরিচিতি পান।
টেরা ২.০ এবং নতুন প্রচেষ্টা
টেরার পতনের পর, ডো কওয়ান টেরা ইকোসিস্টেম পুনরুজ্জীবিত করার জন্য টেরা ২.০ নামে একটি নতুন ব্লকচেইন চালু করেন। এই নতুন ব্লকচেইনে একটি নতুন LUNA টোকেন চালু করা হয়, যা অ্যালগরিদমিক স্টেবল কয়েনের উপর নির্ভরশীল নয়। তবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর কারণে টেরা ২.০ সফল হতে পারেনি।
ডো কওয়ানের ভবিষ্যৎ
ডো কওয়ান বর্তমানে আইনি সমস্যায় জড়িত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যর্পণের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে সিকিউরিটিজ জালিয়াতি, ওয়্যার জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিং অন্তর্ভুক্ত। যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁকে সর্বোচ্চ ১১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
ক্রিপ্টো জগতে ডো কওয়ানের প্রভাব
ডো কওয়ানের কাহিনী ক্রিপ্টো জগতে নিয়ন্ত্রণ এবং জবাবদিহিতার গুরুত্ব তুলে ধরে। তাঁর পতন শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসাবে বিবেচিত হয়। টেরার পতন ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পে নিয়ন্ত্রণ এবং স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়েছে।
ডোকওয়ানের জীবনী এবং টেরার পতন ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি শিল্পের নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ভবিষ্যতে, ক্রিপ্টো শিল্পের উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডোকওয়ানের কাহিনী শিল্পের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসাবে কাজ করে, যা ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনা এড়াতে সাহায্য করতে পারে।