Your Cart

Subtotal
$0
স্ক্যাম অভিজ্ঞতা

ভালোবাসার মুখোশে প্রতারণা

আমি, শ্রেয়া দত্ত, ফিলাডেলফিয়ার একজন টেক প্রফেশনাল। ৩৭ বছর বয়সে ডিভোর্সের পর নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। ক্যারিয়ারে ঠিকই এগোচ্ছিলাম, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে একটু হতাশ ছিলাম। একদিন হিঞ্জ ডেটিং অ্যাপে "অ্যানসেল" নামে একজনের সাথে মেলামেশা শুরু করলাম। তিনি নিজেকে ফিলাডেলফিয়ার একজন ফ্রেঞ্চ ওয়াইন ট্রেডার হিসেবে পরিচয় দিলেন।   

 

প্রথম দিকের কথোপকথনগুলো ছিল মিষ্টি, রোমান্টিক। অ্যানসেলের হাসি, মিষ্টি কথাবার্তা আর ইমোজি ভরা মেসেজে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিছুদিন পর তিনি আমাদের কথোপকথন হোয়াটসঅ্যাপে নিয়ে গেলেন। এমনকি তার হিঞ্জ প্রোফাইল ডিলিট করে দিলেন, যাতে আমাকে পুরো সময় দিতে পারেন। আমি এটাকে খুব রোমান্টিক মনে করলাম।  

 

প্রতিদিন দীর্ঘ মেসেজ বিনিময়, সেলফি আদান-প্রদান, এমনকি ছোট ভিডিও কলও করতে শুরু করলাম। অ্যানসেলের শালীনতা আর "লাজুক" ভাব আমাকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু তখন জানতাম না, এই ভিডিও কলগুলো ছিল ডিপফেক টেকনোলজি দিয়ে তৈরি, আর অ্যানসেলের ছবিগুলো ছিল সম্পূর্ণ নকল।  

 

অ্যানসেল আমার প্রতি অবিশ্বাস্য যত্নশীল ছিলেন। প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করতেন, "তুমি খেয়েছো?" বা "কেমন আছো?" এই ছোট ছোট কথাগুলো আমার হৃদয় স্পর্শ করত। ডিভোর্সের পর আমি একজন সত্যিকারের সঙ্গীর জন্য তৃষ্ণার্ত ছিলাম। অ্যানসেল আমাকে সেই ভালোবাসা দেওয়ার ভান করলেন।  

 

তিন মাস পর আবার এক বিকেলে ভিডিও কল এল। স্ক্রিনে দেখা গেল অ্যানসেলকে - কালো ফ্রেমের চশমা, একটু লাজুক হাসি। কথা বলার সময় মাঝেমাঝে দৃষ্টি এড়িয়ে যেত, যেন নার্ভাস হচ্ছে। পরে বুঝলাম, এটা ছিল ডিপফেক ভিডিও কল। কিন্তু তখন তো মনে হয়েছিল এতটা রিয়েল!  

 

এক বিকেলে অ্যানসেল ফিলাডেলফিয়ার একটি ফুলের দোকান থেকে আমাকে এক গুচ্ছ ফুল পাঠালেন। কার্ডে লেখা ছিল, "হানি ক্রিম"। আমি ফুলের সাথে সেলফি তুলে অ্যানসেলকে পাঠালাম। জবাবে তিনি আমাকে লাল চুম্বনের ইমোজি দিয়ে ভরিয়ে দিলেন।  

 

ভ্যালেন্টাইনস ডেতে তার পাঠানো ফুলের গুচ্ছ পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম: "কারো মনে পড়ে থাকাই সবচেয়ে বড় উপহার"। অ্যানসেল কমেন্ট করেছিল: "আমি সবসময় তোমার কথাই ভাবি"। বন্ধুরা লাইক দিতে দিতে ভেবেছিল আমি নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছি।  

 

কিন্তু এই ভালোবাসার খেলার আসল উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদিন অ্যানসেল বলল, "একটা বিস্ময়কর বিনিয়োগ সুযোগ পেয়েছি। শুধু তোমার মতো কাউকে বলতে চাই।" তখন অ্যানসেল আমাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের প্রস্তাব দিলেন। তিনি বললেন, এটা খুব লাভজনক এবং নিরাপদ। আমি প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম, কিন্তু অ্যানসেলের কথায় আস্থা রাখলাম। প্রথমে তার জন্য ৫,০০০ ডলার দিলাম। এক সপ্তাহ পর দেখি অ্যাকাউন্টে ৭,২০০ ডলার! অ্যানসেল খুশি হয়ে বলল, "দেখলে? আমি তোমার জন্য কতটা চিন্তা করি!" 

 

এরপর আমার সঞ্চয়, রিটায়ারমেন্ট ফান্ড এবং এমনকি ঋণ নিয়েও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করলাম। এবং এভাবে এক পর্যায়ে মোট ৪৫০,০০০ ডলার হারালাম। যখন বুঝতে পারলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি বুঝে গেলাম অ্যানসেলের সব পরিচয় ছিল নকল, এবং আমার টাকা উধাও হয়ে গেছে।  

 

সব শেষ হওয়ার পর এখন রাতগুলো জেগে জেগে কাটে। ফোনটা বারবার চেক করি, হয়তো কোনো মেসেজ এসেছে! মাথায় বারবার একটাই প্রশ্ন ঘোরে - "এত ভালোবাসা কি সব ভান ছিল?" মন চাইত বিশ্বাস করতে যে সে হয়তো কোনো বিপদে পড়েছে।  

 

এই ঘটনা শুধু আমারই নয়। আমেরিকায় হাজার হাজার মানুষ এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকরা ভালোবাসার মুখোশ পরে শিকারকে বিশ্বাস করায়, তারপর তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই স্ক্যামের পেছনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অপরাধী সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এই প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই করা খুব কঠিন, কারণ টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

  

আমি এখনো আমার ভুলটা মেনে নিতে পারছি না। আমার মনে হয়েছিল, আমার মস্তিষ্ক হ্যাক হয়ে গেছে। আমার এই কষ্টের গল্প যেন অন্যদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকে। ভালোবাসার নামে প্রতারণার এই জালে যেন আর কেউ না পড়ে।  

avatar

Rokon

An editor at Crypto
View Articles

Crypto Bloger.

0 comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *
Categories
নিরাপত্তা পরামর্শ
2
ট্রেডিং কৌশল
4
স্ক্যাম অভিজ্ঞতা
10
ক্রিপ্টো ব্যক্তিত্ব
19
মার্কেট বিশ্লেষণ
1
Altswave এ কেনা
1
ক্রিপ্টো অভিজ্ঞতা
1
ক্রিপ্টো মেমস
1
এয়ারড্রপ-আইসিও
1
সংগৃহিত ব্লগ
1

Subscribe to our mailing list!

We don't spam