প্রাথমিক কয়েন অফারিং (ICO) কী?
প্রাথমিক কয়েন অফারিং বা আইসিও (ICO) হল ক্রিপ্টোকারেন্সি ইন্ডাস্ট্রির একটি আধুনিক তহবিল সংগ্রহের পদ্ধতি, যা মূলধারার আর্থিক ব্যবস্থায় ব্যবহৃত IPO-এর (Initial Public Offering) মতো। কোনো নতুন কয়েন, অ্যাপ্লিকেশন বা সেবা চালু করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ICO চালু করে।
এই প্রক্রিয়ায় যেসব ব্যবহারকারী প্রকল্পে আগ্রহী, তারা নির্দিষ্ট মূল্যে টোকেন কিনে অংশগ্রহণ করতে পারে। এই টোকেন নতুন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে কাজ করে, যার নির্দিষ্ট কোনো ইউটিলিটি থাকতে পারে বা তা কোম্পানির সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকে—অনেক সময় এটি প্রকল্পে অংশীদারিত্বের প্রতীকও হতে পারে।

ICO কীভাবে কাজ করে?
ICO আয়োজনের পেছনে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে। সাধারণত এটি কয়েকটি ধাপে পরিচালিত হয়:
হোয়াইটপেপার তৈরি: প্রকল্পের ধারণা, প্রযুক্তিগত দিক, মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্য, টোকেনের ব্যবহার এবং রোডম্যাপসহ বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়।
টোকেন অর্থনীতি নির্ধারণ: টোকেনের সংখ্যা ও মূল্য কেমন হবে, তা ঠিক করা হয়। সাধারণত তিন ধরনের ICO কাঠামো দেখা যায়:
নির্দিষ্ট টোকেন ও নির্দিষ্ট মূল্য: নির্দিষ্ট সংখ্যক টোকেন নির্দিষ্ট মূল্যে বিক্রি হয়।
নির্দিষ্ট টোকেন ও পরিবর্তনশীল মূল্য: বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী টোকেনের মূল্য পরিবর্তিত হয়।
পরিবর্তনশীল টোকেন ও নির্দিষ্ট মূল্য: বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী টোকেনের সংখ্যা নির্ধারিত হয়।
ফান্ডরেইজিং পর্ব: আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট ঠিকানায় ক্রিপ্টো পাঠিয়ে টোকেন গ্রহণ করেন।
পোস্ট-ICO কার্যক্রম: মূলধন সংগ্রহের পর প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট শুরু হয় এবং সফল হলে টোকেন এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।

ICO বনাম প্রচলিত তহবিল সংগ্রহ পদ্ধতি
ICO প্রচলিত ফান্ডরেইজিং পদ্ধতির তুলনায় অনেক স্বাধীন ও উন্মুক্ত। যেখানে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বা ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মে অনেক বাধা-বিপত্তি থাকে, ICO-তে যেকোনো ব্যক্তি, যিনি একটি ক্রিপ্টো ওয়ালেট রাখেন, বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
✅ ICO-এর সুবিধা:
বৈশ্বিক অংশগ্রহণের সুযোগ
সরাসরি ও দ্রুত ফান্ডিং
টোকেনের এক্সচেঞ্জে লিকুইডিটি
মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই বিনিয়োগ
❌ ICO-এর ঝুঁকি:
প্রায় সম্পূর্ণভাবে অনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় জালিয়াতির ঝুঁকি বেশি
প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার হার অনেক বেশি
বিনিয়োগকারীর আইনি সুরক্ষা নেই
অতিমূল্যায়িত ও অস্থিতিশীল টোকেন
ICO-এর সুবিধা ও অসুবিধা
ICO প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপগুলোকে সহজেই মূলধন সংগ্রহে সাহায্য করে। আগাম বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারা এবং কমিউনিটির ভিত্তিতে সাফল্য গড়ে তোলাও ICO-এর বড় দিক।
তবে ICO নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি—কারণ বহু ICO প্রকল্প প্রতারণামূলক ছিল বা তেমন কোনো বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেনি। গবেষণায় দেখা গেছে, অর্ধেকেরও কম ICO চার মাসের বেশি টিকতে পারে।
প্রাথমিক কয়েন অফারিংয়ের কিছু উদাহরণ
ICO-এর জগতে অন্যতম সফল একটি প্রকল্প হল Ethereum। ২০১৪ সালে Ethereum তার ICO থেকে ১৫.৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছিল। প্রতি টোকেনের মূল্য ছিল মাত্র $0.311, আর ২০২১ সালের মে মাসে ETH-এর মূল্য ছিল $4,382.73—যা আগাম বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশাল রিটার্ন।
Ethereum এখন শুধু একটি স্বীকৃত ক্রিপ্টোকারেন্সিই নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ ইকোসিস্টেম, যেখান থেকে হাজার হাজার ডিপ্লয় করা dApp, NFT, এবং DeFi প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে।
🔚 উপসংহার
ICO হলো একটি যুগান্তকারী তহবিল সংগ্রহের মাধ্যম যা স্টার্টআপদের জন্য নতুন দরজা খুলে দেয়। তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সতর্ক, সচেতন ও গবেষণানির্ভর হতে হবে। প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা, টিম, টোকেনোমিক্স ও ইউজ-কেস বুঝে ICO-তে অংশ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।